Political Sociology ( Salima Jannath Lyra )

*- means the importance of the question
*** very very important (1,3,5,7,8,10)
** important (2,4,6,9)

Q1. concept of political sociology, subject matter and scope of political sociology / রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি বা বিষয়বস্তু ***

👉👍ভূমিকাঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান মূলত একটি মিশ্র প্রকৃতির বিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চলমান সম্পর্কের ফলে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আবির্ভাব হয়। বিশ শতকের পূর্বেই মানুষের জ্ঞান চর্চা বিকাশের ফলে সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। এসব ব্যাখ্যা সমূহে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। আর এই শাখাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান। রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান নবীন শাখা হিসেবে আধুনিককালে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমান বিশ্বে গতিশীল রাজনীতিতে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে নতুন নতুন ধারা সংযোজন হচ্ছে ফলে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।


রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের 

প্রকৃতি

রাজনৈতিক সমাজের পরিধি বা বিষয়বস্তু

অধিকতর বাস্তববাদী

অরাজনৈতিক রাজনীতি

গতিশীল প্রকৃতির বিজ্ঞান

রাষ্ট্র রাজনীতি

ক্ষমতার পরিমাপকারী

আমলাতন্ত্র

অন্তঃবিষয়ক বিজ্ঞান

এলিট নিয়ে আলোচনা

নতুন প্রকৃতির বিজ্ঞান

সামাজিক রাজনৈতিক পরিবর্তন

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি সম্প্রাসারণকারী

কর্তৃত্বের আলোচনা

স্বতন্ত্র বিজ্ঞান

রাজনৈতিক সংস্কৃতি

মিশ্র প্রকৃতির বিজ্ঞান

রাজনৈতিক দল চাপ সৃষ্টিকারী দল

 

রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ


রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতিঃ সামাজিক বিজ্ঞানের নবীন শাখা হিসেবে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আত্মপ্রকাশ ঘটে  যে কারণে এর প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক। নিম্নে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১। অধিকতর বাস্তববাদীঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান অধিকতর বাস্তববাদী বিজ্ঞান। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয় বস্তু গবেষণার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান অভিঙ্গবাদী ও পরীক্ষা নিরীক্ষামূলক পদ্ধতি অনুসরণ করে। অন্যদিকে অনুমানমূলক ধারণাকে এড়িয়ে চলে। তাই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানকে একটি বাস্তববাদী বিজ্ঞান বলা হয়।

২। গতিশীল প্রকৃতির বিজ্ঞানঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান এক ধরনের গতিশীল প্রকৃতির বিজ্ঞান। যে কারণে অনেক সমাজতাত্ত্বিক রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের সর্বজনীন সংজ্ঞা প্রদান করতে চাইলেও ব্যর্থ হয়েছন। যার কারণে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান এর পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য সমাজতাত্ত্বিকগণ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কে গতিশীল প্রকৃতির বিজ্ঞান বলেছেন।

৩। ক্ষমতার পরিমাপকারীঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কে ক্ষমতার পরিমাপকারী বিজ্ঞান বলা হয়। কেননা রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান যেহেতু রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে আর রাজনীতির সাথে ক্ষমতা ওতপ্রতভাবে জড়িত। রাজনীতির সাথে জড়িত  ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষমতার বন্টন, ক্ষমতার প্রয়োগ ইত্যাদি রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান পরিমাপ করে। এজন্য রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানকে ক্ষমতার পরিমাপকারী বলা হয়।

৪। অন্তঃবিষয়ক বিজ্ঞানঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানকে অন্তঃবিষয়ক বিজ্ঞান বলা হয়। রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও প্রকৃতি আলোচনা করতে গিয়ে প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী Giovanni Sartoni বলেন- “রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান মূলত একটি অন্তঃবিষয়ক বিজ্ঞান।” কারণ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের শূন্যতা পূরণ করার জন্যই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান এর আবির্ভাব ঘটেছে বলে মনে করা হয়।

৫। নতুন প্রকৃতির বিজ্ঞানঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান এককভাবে নতুন প্রকৃতির বিজ্ঞান। কেননা একদিকে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান যেমন রাষ্ট্রবিজ্ঞান নয়, আবার অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞান ও নয়। কারণ সমাজবিজ্ঞান সমাজ নিয়ে আলোচনা করে আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র নিয়ে আলোচন করে। এই দুই বিজ্ঞানের ‍মিশ্রণে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান এর আবির্ভাব তাই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান নতুন প্রকৃতির বিজ্ঞান।

৬। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি সম্প্রাসারণকারীঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি সম্প্রসারণকারী।কেননা, যে বিষয়গুলো নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে সেই বিষয়গুলো ভিন্নভাবে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে।যার কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি সম্প্রসারিত হচ্ছে।

৭। স্বতন্ত্র বিজ্ঞানঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানকে স্বতন্ত্র বিজ্ঞান বলা হয় । একটি শাস্ত্রকে বিজ্ঞান হিসেবে চিহিৃত করতে গিয়ে Morton A. Kplan (মর্টন এ কাপলন) ৫টি বৈশিষ্ট্যর কথা বলেন। সেগুলো হলোঃ

  • প্রথমত- সংশিলষ্ট শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়কে আলোচনার জন্য বিজ্ঞান সম্মত তাত্ত্বিক ভিত্তি থাকবে।
  • দ্বিতীয়ত- প্রতিটি বিষয়ে সুস্পষ্ট থারণা কাঠামো।
  • তৃতীয়ত- নির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি ও আলোচ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত প্রতিটি বিষয়ের সুনির্দিষ্ট সীমারেখা।
  • চতুর্থত- প্রতিটি বিষয়ের সাথে কয়েকটি সাধারণ সূত্র সংযোগ থাকবে।
  • পঞ্চমত- আলোচ্য বিষয়গুলোর প্রতিটির স্বকীয়তা।

আর উপরিল্লেখিত সকল বিষয় রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের মধ্য বিদ্যমান তাই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানকে একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান ও বলা হয়।

৮। মিশ্র প্রকৃতির বিজ্ঞানঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কে মিশ্র প্রকৃতির বিজ্ঞান বলা হয়। কেননা, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীরা যেমন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আলোচনা করেন তেমনি সমাজব্যবস্থার উপর রাজনৈতিক দলের প্রভাব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও আলোচনা করেন। যার কারণে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কে মিশ্র প্রকৃতির সমাজবিজ্ঞান বলা হয়। এ প্রসঙ্গে অমল কুমার মুখোপ্যাধ্যায় বলেন- রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান আসলে একটি সংযোগ স্থাপনকারী সেতু যা অনেকাংশে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিশ্বাস করে এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক চলক সমূহের উপর সমান গুরুত্ব আরোপ করে।

রাজনৈতিক সমাজের পরিধি বা বিষয়বস্তুঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান একটি গতিশীল বিজ্ঞান। এর পরিধি বা বিষয়বস্তু সম্পর্কে সহজে বলা সম্ভব নয়। তাই এর পরিধি বা বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানা আবশ্যক ।

১। অরাজনৈতিক রাজনীতিঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান অরাজনৈতিক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে। বর্তমান সময়ের রাজনীতি আজ রাষ্ট্রে পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। রাষ্ট্রীয় গন্ডির সীমাবদ্ধতা থেকে আধুনিক রাজনীতি অনেকাংশে মুক্ত।অর্থাৎ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান অরাজনৈতিক রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের পরিবর্তনীয় উপাদান সমূহের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে।

২। রাষ্ট্র ও রাজনীতিঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান এর প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো রাষ্ট্র ও রাজনীতি। ভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান রাষ্ট্র ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র নিয়ে আলোচনা করে এবং সমাজবিজ্ঞান সমাজ নিয়ে আলোচনা করে। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান  কিভাবে রাষ্ট্রের উপর প্রভাব ফেলে সে বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে।

৩। আমলাতন্ত্রঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান আমলাতন্ত্র নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করে।রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে আমলাতন্ত্রকে একটি সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সমাজ যত উন্নত হচ্ছে তত বেশি জটিল হচ্ছে এবং তার সাথে সমাজে আমলাতন্ত্রে প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। যার কারণে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান এ আমলাতন্ত্রকে কোন রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে ধরা হয় না বরং আমলাতন্ত্রকে বৃহৎ সামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়।

৪। এলিট নিয়ে আলোচনাঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে এলিট শ্রেণি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত। সমাজে এক শ্রেণি রয়েছে যাদের সমাজে ক্ষমতা বেশি এবং অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে তাদেকেই এলিট বলা হয়। সাধারণত এলিটরা সমাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। এলিট শ্রেণির গতিবিধি রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা ‍বিশ্লেষণ করে।

৫। সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন ব্যাখ্যা করে। সমাজ সদা পরিবর্তনশীল । তাই সমাজ পরিবর্তন হলে রাজনীতির উপর প্রভাব পড়ে আবার রাজনীতি পরিবর্তন হলে সমাজের উপর প্রভাব পড়ে। এই পরিবর্তনের মধ্যে ভারসাম্য থাকলে সমাজের মধ্যে ভারসাম্য থাকে। আর এ বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করে।

৬। কর্তৃত্বের আলোচনাঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে কর্তৃত্ব সর্বদায় গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতাকে বৈধ করতে পারলে কর্তৃত্বে পরিণত হয়। আর ক্ষমতা কর্তৃত্বে পরিণত হলে ক্ষমতার প্রয়োগ ও বৈধ হয়। তবে ক্ষমতার বৈধতা অনেকাংশে জনগণের উপর নির্ভর করে। কারণ, ক্ষমতা প্রয়োগের বৈধতা জনগণ কর্তৃক স্বীকৃত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

৭। রাজনৈতিক সংস্কৃতিঃ রাজনৈতিক সংস্কৃতি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছাড়া একটি সমাজের প্রকৃত রাজনৈতিক ব্যভস্থা সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। মানুষের সামাজিক জীবন ধারায় রাজনৈতিক সংস্কৃতির সৃষ্টি ও বিকাশ।কোন সমাজের রাজনীতি সফল হবে না ব্যর্থহবে সেটা নির্ভর করে সে সমাজের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপর।

৮। রাজনৈতিক দল ও চাপ সৃষ্টিকারী দলঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে রাজনৈতিক দল ও চাপ সৃষ্টিকারী দল বা গোষ্ঠী নিয়ে আলোচনা করা হয়। রাজনৈতিক দল একটি সমাজের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। আবার চাপসৃষ্টিকারী দল রাজনৈতিক দলকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। যদি সামাজিক ও রাজনৈতিক পরক্রিয়ায় কোন প্রকার দ্বন্দ্ব দেখা দিলে সেক্ষেত্রে চাপসৃষ্টিকারী দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

৯। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান এ রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। যে প্রক্রিয়ায় সমকালীন রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরবর্তী প্রজম্মে প্রবাহিত হয় তাকে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ বলে। যা রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের সকল শাখা নিয়ে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে । রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে সমাজের উপর রাজনীতির প্রভাব ও রাজনীতির উপর সমাজের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়।


Q2. Political socialization and different agents of political socialization with example. **

রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হচ্ছে প্রকৃত সামাজিকীকরণের একটি বিশেষ রুপ।রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমে মানুষ রাজনৈতিক বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করতে পারে। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ একটি রাজনৈতিক শিক্ষার প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে রাজনৈতিক বিষ্বাস, অনুভূতি, রীতি-নীতি, আদর্শ ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা যায়। অর্থাৎ রাজনৈতিক শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনই হলো রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ।

রাজনৈতিক সামাজিকীকরণঃ রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শিশুর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পথে রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও মনোবৃত্তি জাগরিত করা যায় এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের বিভিন্ন রাজনৈতিক উপাত্তের উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়।


রাজনীতিক সামাজিকীকরনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদান ভূমিকা পালন করে, এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি নীচে আলোচনা করা হল-

    1. পরিবার
    2. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
    3. পেশাগত সংগঠন
    4. গণ-মাধ্যম
    5. রাজনীতিক দল
    6. অন্তরঙ্গ গোষ্ঠী
    7. ধর্মীয় সংগঠন


১) পরিবারঃ

রাজনীতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিশুর লালন-পালন পরিবারের মধ্যেই সম্পাদিত হয়। শিশুকে সামগ্রিকভাবেই পরিবারের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া অবধি এই ব্যবস্থাই বহাল থাকে। সমাজব্যবস্থার প্রতি পরিবারের সাধারণ মনোভাব শিশুর মনের উপর গভীরভাবে রেখাপাত করে।
ব্যক্তির রাজনীতিক ব্যক্তিত্বের ভিত্তি পরিবারের ভিতরেই গড়ে ওঠে। ব্যক্তির বিভিন্ন মৌলিক দাবি পূরণের প্রধান উৎস হল পরিবার। পিতামাতার সঙ্গে শিশু নিজেকে একাত্ম করে। বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে শিশু পিতা-মাতার দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ গ্রহণ করে।

রাজনীতিক সামাজিকীকরণের প্রচ্ছন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যম হল পরিবার। শিশু পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের প্রতি স্বভাবজাত আনুগত্য প্রদর্শন করে। এই আনুগত্যের মনোভাব পরবর্তীকালে রাজনীতিক কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্যের মনোভাব সৃষ্টিতে সাহায্য করে। আবার ছোটবেলা থেকেই শিশু পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যতম অংশীদার হিসাবে প্রতিপন্ন হয়। এ ক্ষেত্রে শিশু কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এই অভিজ্ঞতা রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব বিকাশে সাহায্য করে। প্রকৃত প্রস্তাবে পরিবার বা পিতামাতার উপর নির্ভরশীলতার কারণে পিতামাতার রাজনীতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করার প্রবণতা সন্তানদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। 

যদিও রাজনীতিক সামাজিকীকরণের ব্যাপারে পরিবারের ভূমিকা সকল ক্ষেত্রে সমান হয়না। ভৌগোলিক ও আর্থ-সাংস্কৃতিক অবস্থার পার্থক্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারের ভূমিকার মধ্যে তারতম্য দেখা দেয়।


২) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ

বর্তমানে রাজনীতিক জীবন থেকে শিক্ষা কোনক্রমে স্বতন্ত্র নয়। রাজনীতিকরণের প্রভাব থেকে শিক্ষা-জীবন এখন আর বিচ্ছিন্ন নয়। আবার আধুনিককালে রাজনীতিক সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়া শিক্ষা-ব্যবস্থার দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়।

সুস্পষ্ট রাজনীতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম ও কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক তাদের জীবন ও রাজনীতিক সামাজিকীকরণের উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজনীতিক জীবনের অলিখিত রীতি-নীতি সঞ্চারিত করে। শিক্ষা-ব্যবস্থার পাঠ্যক্রমে পৌরবিদ্যা ও প্রশাসন সম্পর্কিত পাঠ্যসূচীও অন্তর্ভুক্ত থাকে। এ ধরনের পাঠ্যক্রম ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নির্দিষ্ট ধরনের রাজনীতিক মূল্যবোধ ও মতাদর্শ গড়ে তোলে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষ ধরনের রাজনীতিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

সুস্পষ্টভাবে বা প্রচ্ছন্নভাবে রাজনীতিক মূল্যবোধ ও মতাদর্শ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চারিত করার উদ্যোগ-আয়োজন সাধারণত সকল দেশের পাঠ্যক্রমের মধ্যে অল্পবিস্তর পরিলক্ষিত হয়। স্বদেশের ইতিহাস ও জীবনধারার প্রতি শ্রদ্ধা সৃষ্টির জন্য পাঠ্যক্রমের মধ্যেই অনুকুল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞানের সাহায্যে নির্দিষ্ট ধরনের রাজনীতিক মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হয়।

রাজনীতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরোক্ষ প্রভাবের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও অন্যান্য নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংযোগ থাকে। এই সংযোগ ছাত্রছাত্রীদের রাজনীতিক বিচক্ষণতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।


৩) পেশাগত সংগঠনঃ

বর্তমানে সকল দেশেই বিভিন্ন বৃত্তি বা পেশাগত ভিত্তিতে বিভিন্ন সংঘ-সংগঠনের সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে শ্রমিক সংঘকৃষক সংগঠনবণিক সংঘ প্রভৃতির কথা বলা যায়। এই সমস্ত পেশাগত সংগঠনগুলি আধুনিককালের রাজনীতিক ব্যবস্থায় একটা করে রাজনীতিক পরিচয়ও থাকে। তারফলে পেশাগত সংগঠনের সদস্য-সমর্থকদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠপোষক রাজনীতিক দলের মতাদর্শমূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি সঞ্চারিত হয়।


৪) গণ-মাধ্যমঃ

সংবাদপত্রবেতারচলচ্চিত্রদূরদর্শন প্রভৃতি গণ-সংযোগের মাধ্যমসমূহ এখনকার রাজনীতিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রাজনীতিক বিষয়-সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা এবং আনুষঙ্গিক ভাষা এই সমস্ত গণমাধ্যমের সাহায্যে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে যায়। তারফলে রাজনীতিক জীবনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।


৫) রাজনীতিক দলঃ

বর্তমানে রাজনীতিক ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল রাজনীতিক দল। রাজনীতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে এই রাজনীতিক দলের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বহুসংখ্যক মানুষকে রাজনীতিক দল রাজনীতিক জীবনের বহুমুখী কার্যাবলীর সঙ্গে সংযুক্ত করে। এরফলে জনসাধারণের রাজনীতিক সচেতনতা সম্প্রসারিত হয়রাজনীতিক মূল্যবোধ ও মনোভাব সুদৃঢ় হয় এবং নতুন রাজনীতিক বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি হয়।


৬) অন্তরঙ্গ গোষ্ঠীঃ

আধুনিককালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় বিকাশ ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে শিল্পয়াননগরায়ণ ও আধুনিকীকরণের ফলে সাবেকী সমাজব্যবস্থা ও জীবনধারার পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে ব্যক্তি জীবনের প্রয়োজন বিবিধ ও বিচিত্র এবং সমস্যাও বহু ও বিভিন্ন। এই কারণে এখন ব্যক্তিকে তার প্রয়োজন পূরণ ও সমস্যাদির সমাধানের জন্য অন্তরঙ্গ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হতে হয় এবং তার সাহায্য গ্রহণ করতে হয়। সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের গোষ্ঠীকেই অন্তরঙ্গ গোষ্ঠী বলা হয়। আধুনিক সমাজে এ রকম অন্তরঙ্গ গোষ্ঠী আনুষ্ঠানিকভাবে বা অ-আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হতে দেখা যায়। এই গোষ্ঠীগুলি ব্যক্তি-মানুষের রাজনীতিক জীবনকে প্রভাবিত করে এবং রাজনীতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্তরঙ্গ বন্ধু-বান্ধবের রাজনীতি বিষয়ক মনোভাব ও মতামত সমবয়স্কদের রাজনীতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে। গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সদস্য ব্যক্তিরা অংশীদার হয়। তারফলে তাদের মধ্যে যে রাজনীতিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়তা রাজনীতিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ব্যক্তি-মানুষের রাজনীতিক চিন্তা-চেতনামূল্যবোধ ও মতাদর্শকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে অন্তরঙ্গ গোষ্ঠীর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। অন্তরঙ্গ গোষ্ঠীসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বিরোধিতার মনোভাব সৃষ্টি করতে পারেআবার তার পরিবর্তনের প্রবণতাও সৃষ্টি করতে পারে। সমবয়স্কদের পারস্পরিক সম্পর্ক হল সমতার সম্পর্ক। এই সম্পর্ক হল আদান- প্রদানের সম্পর্ক। অন্তরঙ্গ গোষ্ঠীর সম্পর্কের মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ অনেক কিছু আয়ও করতে পারে। এই কারণে রাজনীতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে অন্তরঙ্গ গোষ্ঠীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।


৭) ধর্মীয় সংগঠনঃ

ধর্মীয় চেতনা রাজনীতিক সামাজিকীকরণকে প্রভাবিত করে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ধর্মীয় আচার- অনুষ্ঠানসমূহ ব্যক্তি-মানুষের জীবনধারাকে প্রভাবিত করে। রাজনীতিক ক্ষেত্রে বিশ্বাসমূল্যবোধমনোভাব প্রভৃতি ধর্মীয় বিচার-বিবেচনার দ্বারা প্রভাবিত হয়। তবে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ ধ্যান-ধারণার বিকাশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা হ্রাস পেয়েছে।

মূল্যায়নঃ

        পরিশেষে বলা যায় রাজনৈতিক সামাজিকীকরনের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত উপাদানগুলিই যথেষ্ঠ নয়। সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন নতুন উপাদানের যেমন আবির্ভাব ঘটতে পারে তেমনি পুরনো কোনো উপাদানও গুরুত্বহীন হয়ে যেতে পারে।


Q3. Concept of political culture, Classification of political culture . political culture in Bangladesh. ***


‘সংস্কৃতি’ ধারণাটি সমাজবিজ্ঞানে অনেক পূর্ব থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এই ধারণার ব্যবহার শুরু হয়। জাতীয় চরিত্র ও মনোভাব বোঝার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি কথাটি ব্যবহূত হয়। কোনো দেশের জাতীয় চরিত্র ও মনোভাবের প্রতীক হলো সে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। তাই কোনো দেশের রাজনীতিকে বুঝতে হলে সে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অধ্যয়ন করা খুবই জরুরি। যারা রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারণাকে জনপ্রিয় করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন উলাম বিয়ার (Wlam Beer) ও ডেভিড অ্যালমন্ড (David Almond)। এছাড়াও যাদের নাম এই ধারণার সাথে জড়িত তারা হচ্ছেন কোলম্যান (Coleman), সিডনি ভারবা (Sydney Verba) ও লুসিয়ান পাই (Lucian Pye)। রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারণা বিকাশে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে ডেভিড অ্যালমন্ড (David Almond) ও সিডনি ভারবা (Sydney Verba) কর্তৃক ১৯৬৩ সালে লিখিত বই ‘The Civic Culture’।

ক. সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি

খ. অধীন রাজনৈতিক সংস্কৃতি

গ. অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি


 সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি

যেখানে জনগণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা বা সরকার, সরকারের ভূমিকা, তার নিয়মনীতি এবং নিজের ভূমিকা অথবা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকারী হিসেবে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে অসচেতন, সেখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি সংকীর্ণ। অর্থাৎ, সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূল বৈশিষ্ট্য হলো জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও জীবন সম্পর্কে জনগণ সচেতন নয়। সনাতন সমাজব্যবস্থা এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে এ ধরনের সংস্কৃতি রয়েছে। এরূপ সংস্কৃতিতে জনগণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে উদাসীন থাকে। জনগণের ধ্যানধারণা এবং জ্ঞান সীমিত থাকে।

অধীন রাজনৈতিক সংস্কৃতি

যেখানে জনগণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সরকারি নিয়মনীতি প্রভৃতি সম্পর্কে সচেতন, তবে দাবি পেশ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সদস্য হিসেবে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে উদাসীন, সেখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে অধীন রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলা যায়। এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে জনগণের সম্পর্ক নিষ্ক্রিয়। এখানে জনগণ সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন হলেও তা সীমিত পর্যায়ে। কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে জনগণ আগ্রহী নয়। এরূপ সংস্কৃতিতে জনগণের একটি বড় অংশ সরকারের সিদ্ধান্তকে অপ্রতিরোধ্য হিসেবে মনে করে। তাই এ ব্যাপারে জনগণ তেমন একটা আগ্রহ প্রকাশ করে না।

 অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি

যেখানে জনগণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা, সরকার, দাবিদাওয়া, সরকারি সিদ্ধান্ত ও নিয়মনীতি এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার সদস্য হিসেবে নিজের অধিকার ও দায়দায়িত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন সেখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি অংশগ্রহণমূলক। উন্নত সমাজগুলোতে এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি লক্ষণীয়। এরূপ সমাজে জনগণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির এ ত্রিমুখী শ্রেণিবিন্যাস সম্পূর্ণ নয়। কেননা কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থায়ই প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা, কর্মকাণ্ড ও দায়দায়িত্ব সম্পর্কে সমান দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায় না। সুতরাং সুস্পষ্টভাবে বলা যায়, রাজনৈতিক, সংস্কৃতির মুখ্য তিনটি শ্রেণির কোনোটিই একটি ব্যবস্থায় এককভাবে উপস্থিত থাকে না। ফলে রাজনৈতিক সংস্কৃতির এ ত্রিমুখী শ্রেণিবিন্যাসকরণ পর্যাপ্ত নয়। কাজেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো মিশ্র প্রকৃতির। এ সংস্কৃতিকে Almond ও Verba মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারা মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন।




Q4.  Concept of Power, classification of Power and it's discussion. **




শক্তির ধারণা (Concept of Power)

শক্তি হলো সেই ক্ষমতা বা সামর্থ্য যা ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র অন্যদের চিন্তা, আচরণ বা কাজকে প্রভাবিত করতে পারে। শক্তি সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। এটি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। রাজনীতি, কূটনীতি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তির ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শক্তির বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  1. সম্পর্কমূলক (Relational): শক্তি এক পক্ষ থেকে অন্য পক্ষের ওপর প্রয়োগ করা হয়।
  2. প্রভাব বিস্তারমূলক (Influential): এটি আচরণ, চিন্তা ও কাজকে প্রভাবিত করে।
  3. সাংগঠনিক (Structural): শক্তি কোনো গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংগঠিত হয়।
  4. পরিস্থিতিভিত্তিক (Situational): এটি পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।

শক্তির শ্রেণীবিভাগ (Classification of Power)

শক্তি বিভিন্ন রূপে বিদ্যমান। এর শ্রেণীবিভাগ করতে গেলে তা উৎস, প্রয়োগের পদ্ধতি এবং প্রভাবের ধরন অনুযায়ী ভাগ করা যায়।

১. রাজনৈতিক শক্তি (Political Power)

রাজনৈতিক শক্তি হলো আইন, নীতিমালা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা।

  • উদাহরণ: সরকারের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা, নীতিমালা নির্ধারণ বা জনগণের আচরণ নিয়ন্ত্রণ।
  • গুরুত্ব:
    • শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
    • নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা।
    • অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষা।

২. অর্থনৈতিক শক্তি (Economic Power)

অর্থনৈতিক শক্তি হলো সম্পদ, পুঁজি এবং উৎপাদনের উপায় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার।

  • উদাহরণ: তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর (OPEC) ভূমিকায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব।
  • গুরুত্ব:
    • সরাসরি জীবিকা ও উন্নয়নে প্রভাব ফেলে।
    • রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে।
    • আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী হতে সাহায্য করে।

৩. সামরিক শক্তি (Military Power)

সামরিক শক্তি হলো সামরিক বাহিনী, অস্ত্র এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতা প্রয়োগ করা।

  • উদাহরণ: কোনো দেশের নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য সামরিক বাহিনীর ব্যবহার বা যুদ্ধ পরিচালনা।
  • গুরুত্ব:
    • জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
    • আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সংলাপে প্রভাব ফেলে।
    • প্রতিরক্ষামূলক এবং আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করে।

৪. নরম শক্তি (Soft Power)

নরম শক্তি হলো আকর্ষণীয় সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার।

  • উদাহরণ: হলিউডের চলচ্চিত্র, আন্তর্জাতিক শিক্ষাবৃত্তি, বা কোনো দেশের পর্যটন শিল্প।
  • গুরুত্ব:
    • দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলে।
    • বিশ্বজুড়ে একটি দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
    • সমর্থন ও সহযোগিতা সহজতর করে।

৫. কঠোর শক্তি (Hard Power)

কঠোর শক্তি হলো সামরিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে অন্যদের বাধ্য করা।

  • উদাহরণ: অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক অভিযান।
  • গুরুত্ব:
    • তাত্ক্ষণিক প্রভাব ফেলে।
    • অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

শক্তি নিয়ে আলোচনা (Discussion on Power)

১. রাজনৈতিক শক্তি এবং প্রভাব:

রাজনৈতিক শক্তি সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক। আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে এটি সমাজে শৃঙ্খলা আনয়ন করে। তবে ক্ষমতার অপব্যবহারে এটি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে।

২. অর্থনৈতিক শক্তির ভূমিকা:

অর্থনৈতিক শক্তি সরাসরি জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের ডলার বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাবশালী।

৩. সামরিক শক্তির গুরুত্ব:

সামরিক শক্তি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। তবে এটি যদি সীমাহীন ব্যবহৃত হয়, তাহলে সংঘাত বা যুদ্ধ বৃদ্ধি পায়।

৪. নরম শক্তির কৌশল:

বর্তমান বিশ্বে নরম শক্তি দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত ও বলিউড বা চীনের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট।

৫. কঠোর শক্তি বনাম নরম শক্তি:

  • কঠোর শক্তি: শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দ্রুত ফলাফল অর্জন।
  • নরম শক্তি: আকর্ষণ এবং প্রভাবের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক।
    উভয় শক্তির ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


5. Political parties, types and rules. ***

রাজনৈতিক দলগুলোর ধরন এবং ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যেতে পারে। নিচে বাংলায় এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে লেখা হলো।

রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞা

রাজনৈতিক দল হলো একটি সংগঠিত গোষ্ঠী যা নির্দিষ্ট আদর্শ, নীতি বা উদ্দেশ্য অনুসরণ করে এবং জনগণের সমর্থন লাভের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে চায়। এই দলগুলোর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের ইচ্ছা ও মতামত প্রকাশিত হয়।

রাজনৈতিক দলের ধরন

রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এগুলো প্রধানত নিম্নলিখিত ভাগে বিভক্ত:

১. আদর্শভিত্তিক দল (Ideological Parties):

এই দলগুলো একটি নির্দিষ্ট আদর্শ বা নীতির ভিত্তিতে গঠিত হয়। যেমন:

  • সমাজতান্ত্রিক দল
  • ধর্মভিত্তিক দল
  • উদারপন্থী বা রক্ষণশীল দল

২. জাতীয়তাবাদী দল (Nationalist Parties):

এই দলগুলো জাতির ঐক্য ও স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে।
উদাহরণ: বাংলাদেশে বিএনপি এবং ভারতের শিবসেনা।

৩. গণভিত্তিক দল (Mass Parties):

এগুলো সাধারণ জনগণের বৃহৎ অংশের সমর্থন নিয়ে গঠিত হয়।
উদাহরণ: আওয়ামী লীগ, কংগ্রেস।

৪. এলিটভিত্তিক দল (Elite Parties):

এ দলগুলো সাধারণত উচ্চবিত্ত বা ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হয়।

৫. একদলীয় শাসনব্যবস্থার দল (Single-Party Systems):

কিছু দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান থাকে, যেখানে একটি দলই রাষ্ট্র পরিচালনা করে।
উদাহরণ: চীনের কমিউনিস্ট পার্টি।

রাজনৈতিক দলের ভূমিকা

১. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টি:

রাজনৈতিক দলসমূহ নির্বাচন, আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভূমিকা রাখে এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

২. নীতি প্রণয়ন:

সরকারি দল এবং বিরোধী দল উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা তৈরি এবং সমালোচনায় ভূমিকা পালন করে।

৩. গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা:

রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতন্ত্রের চর্চা নিশ্চিত করে।

৪. জনমতের প্রতিফলন:

জনগণের মতামত দলগুলোর মাধ্যমে প্রভাবিত হয় এবং নীতিতে প্রতিফলিত হয়।

৫. সচেতনতা বৃদ্ধি:

রাজনৈতিক দলসমূহ জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা পালন করে।

৬. নেতৃত্ব তৈরি:

দলগুলো বিভিন্ন স্তরে নেতা তৈরি করে যারা ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।

উপসংহার

রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপরিহার্য উপাদান। বিভিন্ন ধরণের রাজনৈতিক দল সমাজে ভারসাম্য রক্ষা, জাতীয় উন্নয়ন এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, দলগুলোর কার্যক্রম সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ না হলে তা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, সঠিক নেতৃত্ব ও আদর্শের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


6. Concept of Elite, role of elite in developing country. **

এলিটের ধারণা (Concept of Elite)

"এলিট" শব্দটি সাধারণত সমাজের সেই গোষ্ঠী বা ব্যক্তিদের বোঝায় যারা ক্ষমতা, সম্পদ, জ্ঞান বা প্রভাবের দিক থেকে অন্যদের তুলনায় অগ্রসর এবং সমাজে নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা পালন করে। এলিট সমাজের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যারা রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি প্রণয়ন প্রভাবিত করে।

এলিট তত্ত্বে (Elite Theory) বলা হয় যে, সমাজের প্রতিটি স্তরে কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সবসময় প্রভাব বিস্তার করে এবং ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করে।

এলিট তত্ত্বের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা:

  • ভিলফ্রেডো প্যারেটো: তিনি দাবি করেছিলেন যে, ক্ষমতা সবসময় "সংখ্যালঘু শ্রেণি" বা এলিটদের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে।
  • গায়েতানো মোস্কা: তাঁর মতে, ক্ষমতাসীন এলিট শ্রেণি সবসময় সংখ্যালঘু এবং সাধারণ মানুষের ওপর শাসন করে।

উন্নয়নশীল দেশে এলিটদের ভূমিকা (Role of Elite in Developing Countries)

উন্নয়নশীল দেশে এলিটরা সমাজে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের ক্ষমতা এবং প্রভাবের কারণে তারা রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন খাতে পরিবর্তন আনার প্রধান চালিকা শক্তি।

১. নীতি প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ:

উন্নয়নশীল দেশে এলিটরা সরকারের নীতি প্রণয়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা এবং প্রশাসনের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে।

২. আর্থসামাজিক উন্নয়ন:

এলিট শ্রেণি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এবং তারা আর্থিক সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্পায়ন এবং অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখে।

৩. নেতৃত্ব প্রদান:

এলিটরা সমাজের নেতা হিসেবে কাজ করে। তারা সমাজের সমস্যা চিহ্নিত করে এবং তা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

৪. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা:

উন্নয়নশীল দেশে এলিটরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

৫. আধুনিকীকরণ ও সংস্কার:

উন্নয়নশীল দেশে এলিটরা শিক্ষাব্যবস্থা, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতিতে আধুনিকীকরণ আনার চেষ্টা করে। তারা প্রগতিশীল ধারণা এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতির মাধ্যমে সমাজকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা পালন করে।

৬. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক:

উন্নয়নশীল দেশের এলিটরা বৈদেশিক সম্পর্ক এবং বিনিয়োগ আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা দেশের স্বার্থে বৈশ্বিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করে।

সমালোচনা:

উন্নয়নশীল দেশে এলিটদের ভূমিকা সবসময় ইতিবাচক নয়। তাদের প্রভাবের কারণে অনেক সময় সমাজে বৈষম্য এবং অন্যায় বাড়তে পারে। কিছু সমস্যা হলো:

  • ক্ষমতার অপব্যবহার: এলিট শ্রেণি অনেক সময় নিজেদের স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করে।
  • বৈষম্য বৃদ্ধি: এলিটদের একচেটিয়া প্রভাবের কারণে সমাজে ধনী-গরিবের ব্যবধান বাড়তে পারে।
  • গণতন্ত্রের সংকট: এলিট শ্রেণি অনেক সময় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অবজ্ঞা করে নিজেদের সুবিধার জন্য কাজ করে।
  • জনগণের উপেক্ষা: সাধারণ মানুষের মতামতকে অবমূল্যায়ন করে শুধু এলিট শ্রেণির ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

উপসংহার

উন্নয়নশীল দেশে এলিটদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা সমাজের উন্নয়ন, নেতৃত্ব এবং আধুনিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তবে, তাদের কাজের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে যাতে সমাজের প্রতিটি স্তরে সমান উন্নয়ন সম্ভব হয়। এলিটরা যদি জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয় এবং বৈষম্য দূর করার জন্য কাজ করে, তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে।


7. Political participation and its role in promoting democracy. ***

রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এর ভূমিকা

রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সংজ্ঞা

রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বলতে বোঝায় নাগরিকদের সেই কার্যক্রম ও কর্মকাণ্ড যা তাদের শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ এবং প্রভাব বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করে। এটি বিভিন্নভাবে হতে পারে, যেমন:

  • ভোটাধিকার প্রয়োগ
  • রাজনৈতিক দল বা আন্দোলনে অংশগ্রহণ
  • রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ
  • বিক্ষোভ, পিটিশন বা জনসভায় অংশ নেওয়া

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ভূমিকা

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূলে রয়েছে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। রাজনৈতিক অংশগ্রহণ গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করতে কীভাবে ভূমিকা রাখে তা নিচে আলোচনা করা হলো।

১. জনগণের মতামত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি

রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনগণ তাদের মতামত ও চাহিদা প্রকাশ করতে পারে। নির্বাচনের মাধ্যমে তারা তাদের পছন্দের প্রতিনিধিকে নির্বাচন করে এবং তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান চায়।

উদাহরণ:

ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণ এমন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারে যারা তাদের স্বার্থ রক্ষা করবে।

২. শাসনব্যবস্থার জবাবদিহিতা বৃদ্ধি

নাগরিকদের সক্রিয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাতে তারা জনগণের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করে। এর ফলে শাসনব্যবস্থা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হয়।

উদাহরণ:

বিরোধী দল বা সুশীল সমাজের প্রতিবাদ সরকারের দুর্নীতি কমাতে বাধ্য করতে পারে।

৩. রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি

রাজনৈতিক অংশগ্রহণ জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ায়। এটি মানুষকে তাদের অধিকার, দায়িত্ব এবং রাষ্ট্রের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত করে।

উদাহরণ:

নির্বাচনের আগে বিভিন্ন প্রচারণা জনগণকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।

৪. গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা

রাজনৈতিক অংশগ্রহণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। সক্রিয় নাগরিক অংশগ্রহণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বৈধতা নিশ্চিত করে এবং গণতন্ত্রের মূল চেতনা সুরক্ষিত করে।

উদাহরণ:

নিয়মিত এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গণতন্ত্রকে মজবুত করে।

৫. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা

রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্ষমতা শুধুমাত্র এলিটদের হাতে সীমাবদ্ধ না থেকে জনগণের মধ্যে বিকেন্দ্রীভূত হয়। এতে সমাজের প্রতিটি স্তরে জনগণের ভূমিকা নিশ্চিত হয়।

উদাহরণ:

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ ক্ষমতাকে স্থানীয় স্তরে বিকেন্দ্রীভূত করে।

৬. সামাজিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা

রাজনৈতিক অংশগ্রহণ জনগণকে সামাজিক সমস্যা সমাধানে সক্রিয় করে। এর মাধ্যমে সাম্য, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সহজ হয়।

উদাহরণ:

নারী অধিকার, পরিবেশ সুরক্ষা বা শ্রমিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ গণতন্ত্রকে সমৃদ্ধ করে।

৭. বৈষম্য দূরীকরণ

রাজনৈতিক অংশগ্রহণ জনগণের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে সহায়তা করে। এটি বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেয়।

উদাহরণ:

মহিলাদের জন্য নির্ধারিত আসন বা সংরক্ষিত কোটার মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সম্ভব।

রাজনৈতিক অংশগ্রহণের চ্যালেঞ্জ

যদিও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে, তবে এর কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে:

  • অশিক্ষা ও অসচেতনতা: অনেক মানুষ রাজনৈতিক বিষয়ে সঠিক জ্ঞান রাখে না।
  • দারিদ্র্য: দারিদ্র্যের কারণে অনেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে না।
  • রাজনৈতিক সহিংসতা: অনেক সময় রাজনৈতিক সহিংসতা সাধারণ মানুষকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখে।
  • দলীয় প্রভাব: দলীয় স্বার্থ জনগণের প্রকৃত মতামতকে অবমূল্যায়ন করতে পারে।

উপসংহার

রাজনৈতিক অংশগ্রহণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। এটি নাগরিকদের মতামত প্রকাশ, শাসনব্যবস্থাকে জবাবদিহিমূলক করা এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্যতম মাধ্যম। তবে, রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পথের চ্যালেঞ্জগুলো দূর করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সক্রিয় নাগরিক অংশগ্রহণই একটি রাষ্ট্রকে উন্নত ও সুশাসিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারে।


8. challenges of political parties in Bangladesh. ***

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, এসব দল নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যা তাদের কার্যক্রম এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

১. দলীয়করণ এবং অতি দলীয় প্রভাব

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় দলীয়করণ একটি বড় সমস্যা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে রাজনৈতিক প্রভাব সুস্পষ্ট।

  • ফলাফল: এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা নষ্ট হয়।

২. গণতন্ত্রের অভাব

রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার অভাব লক্ষ্য করা যায়। অধিকাংশ দল একক নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল এবং সাধারণ কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করা হয়।

  • ফলাফল: এতে দলগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয় এবং কার্যকর নেতৃত্ব গড়ে ওঠে না।

৩. দুর্নীতি এবং স্বার্থবাদিতা

রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা এবং সদস্যরা ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে।

  • ফলাফল: জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আস্থা হ্রাস পায়।

৪. রাজনৈতিক সহিংসতা এবং সংঘাত

রাজনৈতিক সহিংসতা বাংলাদেশের একটি সাধারণ চিত্র। বিভিন্ন সময় দলীয় সংঘর্ষ, বিক্ষোভ, এবং নির্বাচনী সহিংসতা দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে।

  • ফলাফল: এটি জনগণের জানমালের ক্ষতি এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে।

৫. আদর্শহীন রাজনীতি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক ক্ষেত্রে সুসংহত আদর্শের অভাব দেখা যায়। দলগুলো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে।

  • ফলাফল: এটি টেকসই উন্নয়ন এবং নীতি নির্ধারণে বাধা সৃষ্টি করে।

৬. অর্থায়ন এবং কালো টাকার ব্যবহার

রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমে টাকার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং কালো টাকার প্রভাব রয়েছে।

  • ফলাফল: এতে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নষ্ট হয় এবং ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।

৭. সুশীল সমাজ ও বিরোধী দলের উপেক্ষা

সুশীল সমাজ এবং বিরোধী দলের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়া এবং দমন করার প্রবণতা রয়েছে।

  • ফলাফল: এতে গণতন্ত্র দুর্বল হয় এবং জনগণের মতামত অবমূল্যায়ন করা হয়।

৮. তরুণদের অগ্রাহ্য করা

রাজনৈতিক দলগুলো তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে আনতে অনীহা প্রকাশ করে এবং পুরনো নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল থাকে।

  • ফলাফল: নতুন নেতৃত্বের অভাব এবং রাজনৈতিক স্থবিরতা দেখা দেয়।

৯. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও জোট রাজনীতির সমস্যা

বাংলাদেশে রাজনৈতিক জোটগুলোর মধ্যে স্থিতিশীলতা নেই। জোটের ভাঙন এবং অস্থিতিশীলতা রাজনীতিকে অশান্ত করে তোলে।

  • ফলাফল: এটি জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করে।

১০. আন্তর্জাতিক চাপ এবং বৈদেশিক প্রভাব

রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক সময় আন্তর্জাতিক সংস্থা বা বিদেশি রাষ্ট্রের চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

  • ফলাফল: এতে জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

উপসংহার

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন গণতন্ত্র চর্চা, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করা। দলগুলো যদি আদর্শিক এবং জনগণের কল্যাণমুখী রাজনীতি চর্চা করে, তবে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নত এবং গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে।


9. State **

রাষ্ট্রের সংজ্ঞা

রাষ্ট্র একটি সংগঠিত সামাজিক ও রাজনৈতিক সত্তা, যা নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে জনগণের ওপর সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে। এটি জনগণের স্বার্থে শাসন, শৃঙ্খলা এবং আইন প্রতিষ্ঠা করে।

রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় বিখ্যাত দার্শনিকদের মতামত:

  1. আরিস্টটল: "রাষ্ট্র হলো একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যা সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠিত।"
  2. ম্যাকাইভার: "রাষ্ট্র হলো একটি মানুষের সংস্থা, যা আইন তৈরি ও বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখে।"

রাষ্ট্রের মূল উপাদানসমূহ

রাষ্ট্র গঠনের জন্য চারটি প্রধান উপাদান প্রয়োজন:

১. ভূখণ্ড:

রাষ্ট্রের জন্য একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা আবশ্যক। এটি কোনো দেশের শারীরিক সীমানা নির্ধারণ করে।

২. জনসংখ্যা:

রাষ্ট্র গঠনের জন্য অবশ্যই একটি জনগোষ্ঠী থাকা দরকার। এই জনগণই রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার অধীন।

৩. সরকার:

সরকার রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে। এটি আইন প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং বিচার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে।

৪. সার্বভৌমত্ব:

রাষ্ট্রের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাই সার্বভৌমত্ব। এটি অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত।

রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য

১. সার্বভৌম ক্ষমতা:

রাষ্ট্রের ক্ষমতা সর্বোচ্চ এবং অন্য কোনো শক্তি এর ওপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।

২. সংগঠিত প্রতিষ্ঠান:

রাষ্ট্র একটি সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান, যা জনগণের নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করে।

৩. নির্দিষ্ট সীমানা:

রাষ্ট্রের ভূখণ্ড নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

৪. স্থায়িত্ব:

রাষ্ট্র একটি স্থায়ী সত্তা। সরকারের পরিবর্তন হলেও রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে।

রাষ্ট্রের গুরুত্ব

১. আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা:

রাষ্ট্র জনগণের জন্য আইন প্রণয়ন এবং শৃঙ্খলা রক্ষা করে।

২. নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ:

রাষ্ট্র নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত করে।

৩. উন্নয়ন কার্যক্রম:

রাষ্ট্র অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করে।

৪. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক:

রাষ্ট্র তার জনগণের স্বার্থে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে।

উপসংহার

রাষ্ট্র হলো একটি সংগঠিত কাঠামো, যা জনগণের জীবনমান উন্নত করতে কাজ করে। এর মাধ্যমে আইন ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হয়। রাষ্ট্র যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে তা একটি সমাজকে শান্তি, উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে পারে।


10. Revolution, causes and consequence. ***

বিপ্লব: সংজ্ঞা, কারণ ও পরিণতি

বিপ্লবের সংজ্ঞা

বিপ্লব বলতে বোঝায় সমাজের, রাষ্ট্রের বা অর্থনৈতিক কাঠামোর একটি দ্রুত এবং মৌলিক পরিবর্তন। এটি সাধারণত বিদ্যমান শাসনব্যবস্থা, রাজনৈতিক কাঠামো বা সামাজিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের ব্যাপক আন্দোলনের মাধ্যমে ঘটে।

বিখ্যাত দার্শনিকদের মতে বিপ্লব:
  • আরিস্টটল: "বিপ্লব হলো একটি রাষ্ট্রের বিদ্যমান শাসনব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ নতুন ব্যবস্থায় রূপান্তর।"
  • মার্ক্স: "বিপ্লব হলো শোষিত শ্রেণির দ্বারা শোষক শ্রেণির বিরুদ্ধে সংঘটিত একটি সংগ্রাম।"

বিপ্লবের কারণসমূহ

বিপ্লবের কারণ সাধারণত রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে।

১. রাজনৈতিক কারণ:

  • স্বৈরশাসন বা অত্যাচারী শাসনব্যবস্থা।
  • জনগণের মতামত উপেক্ষা করা।
  • মানবাধিকার লঙ্ঘন।
  • গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অভাব।

২. অর্থনৈতিক কারণ:

  • অর্থনৈতিক বৈষম্য।
  • দরিদ্র শ্রেণির ওপর উচ্চ করের বোঝা।
  • বেকারত্ব ও ক্ষুধা।
  • ধনী-গরিবের মধ্যে বড় পার্থক্য।

৩. সামাজিক কারণ:

  • সামাজিক অসাম্য ও বৈষম্য।
  • ধর্মীয় বা জাতিগত নিপীড়ন।
  • শিক্ষার অভাব ও জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব।

৪. সাংস্কৃতিক কারণ:

  • নতুন আদর্শের প্রতি আকর্ষণ।
  • সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় দমন।

৫. প্রযুক্তিগত পরিবর্তন:

  • শিল্পবিপ্লব বা প্রযুক্তির প্রভাব অনেক সময় বিদ্যমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিপ্লবের কারণ হয়।

বিপ্লবের পরিণতি

বিপ্লব সমাজে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। এর কিছু ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক রয়েছে।

ইতিবাচক পরিণতি:

  1. রাজনৈতিক পরিবর্তন:
    বিদ্যমান শাসনব্যবস্থা বা সরকারকে পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক বা নতুন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।

    • উদাহরণ: ফরাসি বিপ্লবের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
  2. সামাজিক উন্নয়ন:
    অসাম্য এবং শোষণের অবসান ঘটে।

    • উদাহরণ: রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির অধিকার নিশ্চিত করে।
  3. অর্থনৈতিক সংস্কার:
    জমিদারি প্রথা বা শোষণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে।

  4. নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন:
    শিল্পবিপ্লবের ফলে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।

নেতিবাচক পরিণতি:

  1. সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা:
    বিপ্লবের সময় বা পরবর্তী সময়ে সহিংসতা এবং গৃহযুদ্ধ দেখা দিতে পারে।

    • উদাহরণ: ফরাসি বিপ্লবে "গিলোটিনের রাজত্ব"।
  2. অর্থনৈতিক ক্ষতি:
    বিপ্লবের কারণে শিল্প, কৃষি এবং অর্থনীতির উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।

  3. নেতৃত্বের সংকট:
    বিপ্লবের পর উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে শাসনব্যবস্থা দুর্বল হতে পারে।

  4. বহিরাগত হস্তক্ষেপ:
    অনেক সময় বিপ্লবের কারণে অন্য দেশগুলো সুযোগ নিতে চেষ্টা করে।

উপসংহার

বিপ্লব সমাজে পরিবর্তন আনতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এটি সাধারণত শোষণ, অত্যাচার এবং অসাম্যের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সংঘটিত হয়। তবে, বিপ্লবের সঠিক লক্ষ্য এবং উপযুক্ত নেতৃত্ব না থাকলে এটি সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার কারণ হতে পারে। তাই, বিপ্লব সফল করতে সুশিক্ষা, সঠিক পরিকল্পনা এবং গণসমর্থন প্রয়োজন।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Bepari sir - Politics and Governance in South Asia

Basic Computer